ঢাকা ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত মদনে প্রাণিসম্পদের উদ্যোগে মোরগ ও ছাগলের খাদ্য বিতরণ ইটনায় সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত মদনে সংবাদ প্রকাশের পর স্কুল কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙ্গল বিদ্যালয় প্রাঙ্গন দখল করে ঘর নির্মাণ করছেন শিক্ষক রাজধানীতে পার্বত্য জেলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বিপনী বিতান উদ্বোধন করেন: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে মদন উপজেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সায়েম সাধারণ সম্পাদক আরিফ মদনে ফের বয়রাহালা ব্রীজের এপ্রোচ দখল করে ঘর নির্মাণ মদনে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কৃষককে হত্যার চেষ্টা

সাড়ে তিন বছর পর নিজ বাড়িতে সেই রাবেয়া-রোকাইয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৩:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ ২০২১
  • ১৫১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ হায়েচ গাড়িটি বাড়ির উঠোনে গিয়ে থামে। রাবেয়াকে কোলে নিয়ে বাবা রফিকুল ইসলাম এবং রোকাইয়াকে কোলে নিয়ে মা তাসলিমা খাতুন যখন গাড়ি থেকে নামলেন তখন সবার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। এলাকাবাসী আর স্বজনদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন তারা। দুইবোনের মধ্যে রোকাইয়া শারীরিকভাবে নিষ্প্রভ থাকলেও, রাবেয়ার মুখে হাসি যেন লেগেই ছিল। তার মুখের হাসিতেই যেন আনন্দ ছড়িয়েছে সবার প্রাণে। বাবা-মায়ের সাথে হেঁটেই নিজের ঘরে যায় সে। আর দীর্ঘদিন পর স্বজনদের কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন রাবেয়া-রোকাইয়ার মা তাসলিমা খাতুন।

এমন চিত্রের দেখা মেলে সোমবার (১৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটায় পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামে। সিএমএইচ-এ দীর্ঘদিনের চিকিৎসা শেষে জোড়া মাথা আলাদা হয়ে সাড়ে তিন বছর পর নিজেদের বাড়িতে ফিরলো বহুল আলোচিত রাবেয়া-রোকাইয়া। বাড়িতে পৌঁছার পর তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয় স্বজন-প্রতিবেশীরা। রাবেয়া-রোকাইয়া ফিরে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত গোটা গ্রাম। তাদের একনজর দেখতে ভিড় জমায় আশপাশের মানুষ।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ জুন সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয় জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। জন্মের পর থেকে দুশ্চিন্তা ভর করে শিক্ষক দম্পতি বাবা-মা রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুনের। কিভাবে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তারা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে বিভিন্ন গণমাধ্যম। সেই খবর পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি দায়িত্ব নেন রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার।

এরপর ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তির পর ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে দেশী-বিদেশী অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চলে চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার। এই অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন হাঙ্গেরির একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও।

দীর্ঘ চিকিৎসায় ৪৮টি জটিল অস্ত্রোপচারের পর আলাদা করা সম্ভব হয় রাবেয়া-রোকাইয়াকে। এতে অংশ নেন প্রায় ১০০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অবশেষে সাড়ে ৩ বছর পর সোমবার বিকেলে বাবা-মায়ের সাথে বাড়ি ফেরে জোড়া মাথা আলাদা হওয়া রাবেয়া-রোকাইয়া। তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। স্থানীয়রা জানান, তারা কখনও ভাবতে পারেননি জোড়া মাথার রাবেয়া-রোকাইয়াকে আলাদা করা সম্ভব। এই অসম্ভব কাজ সম্ভব হওয়ায় খুশি তারা।

হতাশা কাটিয়ে নিজের সন্তানদের আলাদাভাবে ফিরে পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা-মা। বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, জোড়া মাথার যমজ শিশু জন্মের পর আমাদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। অনেকে অনেক রকম কথা বলেছে। কটু কথাও শুনতে হয়েছে। কিন্তু এখন সেই শিশুদের জন্য আজ সারাবিশ্বে আমি পরিচিত। রাবেয়া রোকাইয়ার বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী, চিকিৎসক সহ গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে তাদের ধন্যবাদ জানান রফিকুল ইসলাম।

মা তাসলিমা খাতুন বলেন, এরপরেও যদি দেশে কারো জোড়া মাথার যমজ সন্তান জন্ম হয় তাদের বলবো, আপনাদের ভয় নেই। আমাদের সাথে সরকার আছে, হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম আছে। জোড়া মাথা আলাদা করা আর কঠিন কিছু নয়। আমাদের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন, যিনি মায়ের মতো বাংলাদেশের জনগণের সকল দু:খ কষ্ট মুছিয়ে দিতে অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছেন। আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীসহ চিকিৎসকদের।

রাবেয়া-রোকাইয়ার আসার খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে ছুটে যান চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সৈকত ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা যে, চাটমোহরের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি পরিবারের দুর্দশার কথা জানতে পেরে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বড় উদারতা ও মানবিকতার পরিচয়। উপজেলা প্রশাসন পরিবারটির পাশে থাকবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

সাড়ে তিন বছর পর নিজ বাড়িতে সেই রাবেয়া-রোকাইয়া

আপডেট টাইম : ১০:২৩:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ হায়েচ গাড়িটি বাড়ির উঠোনে গিয়ে থামে। রাবেয়াকে কোলে নিয়ে বাবা রফিকুল ইসলাম এবং রোকাইয়াকে কোলে নিয়ে মা তাসলিমা খাতুন যখন গাড়ি থেকে নামলেন তখন সবার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। এলাকাবাসী আর স্বজনদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন তারা। দুইবোনের মধ্যে রোকাইয়া শারীরিকভাবে নিষ্প্রভ থাকলেও, রাবেয়ার মুখে হাসি যেন লেগেই ছিল। তার মুখের হাসিতেই যেন আনন্দ ছড়িয়েছে সবার প্রাণে। বাবা-মায়ের সাথে হেঁটেই নিজের ঘরে যায় সে। আর দীর্ঘদিন পর স্বজনদের কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন রাবেয়া-রোকাইয়ার মা তাসলিমা খাতুন।

এমন চিত্রের দেখা মেলে সোমবার (১৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটায় পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামে। সিএমএইচ-এ দীর্ঘদিনের চিকিৎসা শেষে জোড়া মাথা আলাদা হয়ে সাড়ে তিন বছর পর নিজেদের বাড়িতে ফিরলো বহুল আলোচিত রাবেয়া-রোকাইয়া। বাড়িতে পৌঁছার পর তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয় স্বজন-প্রতিবেশীরা। রাবেয়া-রোকাইয়া ফিরে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত গোটা গ্রাম। তাদের একনজর দেখতে ভিড় জমায় আশপাশের মানুষ।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ জুন সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয় জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। জন্মের পর থেকে দুশ্চিন্তা ভর করে শিক্ষক দম্পতি বাবা-মা রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুনের। কিভাবে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তারা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে বিভিন্ন গণমাধ্যম। সেই খবর পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি দায়িত্ব নেন রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার।

এরপর ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তির পর ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে দেশী-বিদেশী অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চলে চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার। এই অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন হাঙ্গেরির একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও।

দীর্ঘ চিকিৎসায় ৪৮টি জটিল অস্ত্রোপচারের পর আলাদা করা সম্ভব হয় রাবেয়া-রোকাইয়াকে। এতে অংশ নেন প্রায় ১০০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অবশেষে সাড়ে ৩ বছর পর সোমবার বিকেলে বাবা-মায়ের সাথে বাড়ি ফেরে জোড়া মাথা আলাদা হওয়া রাবেয়া-রোকাইয়া। তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। স্থানীয়রা জানান, তারা কখনও ভাবতে পারেননি জোড়া মাথার রাবেয়া-রোকাইয়াকে আলাদা করা সম্ভব। এই অসম্ভব কাজ সম্ভব হওয়ায় খুশি তারা।

হতাশা কাটিয়ে নিজের সন্তানদের আলাদাভাবে ফিরে পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা-মা। বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, জোড়া মাথার যমজ শিশু জন্মের পর আমাদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। অনেকে অনেক রকম কথা বলেছে। কটু কথাও শুনতে হয়েছে। কিন্তু এখন সেই শিশুদের জন্য আজ সারাবিশ্বে আমি পরিচিত। রাবেয়া রোকাইয়ার বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী, চিকিৎসক সহ গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে তাদের ধন্যবাদ জানান রফিকুল ইসলাম।

মা তাসলিমা খাতুন বলেন, এরপরেও যদি দেশে কারো জোড়া মাথার যমজ সন্তান জন্ম হয় তাদের বলবো, আপনাদের ভয় নেই। আমাদের সাথে সরকার আছে, হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম আছে। জোড়া মাথা আলাদা করা আর কঠিন কিছু নয়। আমাদের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন, যিনি মায়ের মতো বাংলাদেশের জনগণের সকল দু:খ কষ্ট মুছিয়ে দিতে অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছেন। আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীসহ চিকিৎসকদের।

রাবেয়া-রোকাইয়ার আসার খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে ছুটে যান চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সৈকত ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা যে, চাটমোহরের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি পরিবারের দুর্দশার কথা জানতে পেরে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বড় উদারতা ও মানবিকতার পরিচয়। উপজেলা প্রশাসন পরিবারটির পাশে থাকবে।